We are No One – নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান : Sadique Hossain

Guest Post by SADIQUE HOSSAIN

[The following post by writer Sadique Hossain highlights the way in which with approaching state elections, Bengal’s Muslims are being increasing forced into silence, as contending political parties, especially the CPI(M) and the TMC, stake out their respective agendas. While the stance of all parties is telling, that of the Left is particularly myopic, argues Hossian. AN ]

2026-এ পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভার নির্বাচন হতে চলেছে৷ বাকি প্রায় দশ মাস৷ কিন্তু এখন থেকেই মুখ্য দলগুলো তাদের ন্যারেটিভ কী হতে পারে – তা প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ তারা দৃশ্যত রমজান মাসটিকেই বেছে নিয়েছিল ভোটের দামামা বাজানোর কাজে৷ 

ইদের কিছুদিন আগে সেটা শুরু হল বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে৷ তিনি বিধানসভার বাইরে ঘোষণা করলেন – বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূল থেকে নির্বাচিত মুসলিম বিধায়কদের চ্যাঙদোলা করে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলবেন৷ তাঁর বক্তব্য ধ্বনিত হতে থাকল বিজেপির অন্যান্য বিধায়কদের গলাতেও৷ ইদের পরেই রামনবমী ছিল৷ মাঝখানে ওয়াকফ বিল পাশ হয়ে গেল লোকসভা আর রাজ্যসভাতেও৷ এরমধ্যে তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর শুভেন্দুর কথার প্রেক্ষিতে বললেন শুভেন্দুকে মুর্শিদাবাদে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ এমনকি জোর করে মুর্শিদাবাদে ঢুকতে এলে, দাঙ্গা বাধাতে এলে ভাগীরথের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে৷ এক্ষেত্রে তৃণমূল অবশ্য তাঁকে থামাতে দেরি করল না৷ শো-কজ করা হল৷ এবং হুমায়ুন কবীর প্রথমদিকে ফোঁসফোঁস করলেও পরবর্তীতে চুপ করে গেলেন৷ 

এখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপি এখন আর শুধু মমতার সরকারের দূর্নীতি নিয়ে ভোটে নামছে না৷ বস্তুত এখন তাঁরা দূর্নীতির থেকেও হিন্দুত্ববাদের প্রসারে ও প্রচারে জোর দিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় দেয়াল লেখন শুরু হল – হিন্দু হিন্দু, ভাই ভাই কিংবা তৃণমূল থেকে বাঁচতে হিন্দুদের জোট চাই৷ 

বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তৃনমূল দলকে মুসলমানদের দল হিসাবে চিহ্নিত করতে৷ অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ আগেই ঘোষনা করে দিয়েছিলেন তিনি দীঘাতে জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন৷ যতোদূর খবর পাওয়া যাচ্ছে, মন্দিরের কাজ প্রায় শেষ৷ বিধানসভার ভোটের আগেই সেটার উদ্বোধন হবে৷ এদিকে হাইকোর্টের রায়ে ওবিসি-এ ক্যাটাগোরি বাতিল হয়েছে৷ ওবিসি-এ ক্যাটাগোরির একটা বড়ো অংশ হল মুসলমান জনগোষ্টী৷ হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল বা সিপিএমকে কোনো আন্দোলন করতে দেখা যাচ্ছে না৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে যদিও সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এপিল করা হয়েছে – কিন্তু এই রায়টিকে নিয়ে সামাজিক স্তরে সচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনরকম হেলদোল দেখা যাচ্ছে না৷ 

এখান থেকেই বুঝতে পারা যাবে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের অবস্থান কতোটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে৷ প্রতিদিন নিউজ চ্যানেলের প্রাইম টাইমে মুসলমানদের লক্ষ করে অসভ্য ডিবেট চলছে৷ তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই৷ এদিকে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাল্টা হিন্দুত্বের নরম বা কিছুটা সহনীয় তাশ খেলছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় 30% মুসলমান মানুষের বাস৷ কিন্তু তাদের অস্তিত্ব ক্রমশ স্বচ্ছ কাচের মতো হয়ে গিয়েছে৷ তারা আছে; এইটুকুই৷ তাদের অবস্থান না থাকার মতোই৷ খানিক দূরে স্বচ্ছ কাচ থাকলে যেমন সেটার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না, তেমনি হল মুসলমানদের অস্তিত্ব৷ 

এই সবের থেকে খানিক আলাদা অবস্থান হয়ত আশা করা গিয়েছিল সিপিএমের কাছ থেকে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারা ‘’ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’’ অবস্থানেই অনড়৷ শুভেন্দুর বক্তব্য, যা কীনা ক্রিমিনাল অফেন্স হিসাবে দেখা যেত -সেটাকে লঘু করতে নেমে পড়েছে বাম বাহিনীর একাংশ, মূলত সিপিএম৷ 

ফেসবুকের পোস্টে দেখা যাচ্ছে -মহ: সেলিম লিখছেন – “নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডের ‘’জনৈক অভিষেক’ প্রসঙ্গ যাতে না আসে, তাই শুভেন্দু এতো ‘হিন্দু-মুসলিম’ করছে৷ অথাৎ, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে না৷ এটা তাদের এজেন্ডাও নয়৷ তারা শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচাতে হিন্দুত্ববাদের আমদানি করছে৷ কমরেড সুজন চক্রবর্তী তার ফেসবুকের ওয়ালে যে পোস্টারটি পোস্ট করেছিলেন, সেটার বয়ান এইরকম – মমতা ব্যানার্জির পোষমানা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু মুসলিম লড়িয়ে দিয়ে মমতার ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচাচ্ছে৷ – এই বয়ানে লক্ষ করুন সাবর্ণ কমরেড মুসলমানদের সরাসরি মমতার ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে গণ্য করছেন৷ তিনি একবারও বুঝতে চাইছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের একটা বড়ো অংশ কেন তৃণমূলকে ভোট দেয় বা অঘটন না ঘটলে আগামী নির্বাচনেও দেবে৷ 

এই সাবর্ণ কমরেডকে জানিয়ে রাখি, মুসলমান কোনো ভোট ব্যাঙ্ক নয়৷ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছে বিজেপিকে ঠেকাতে৷ এর আগে বামফ্রন্টকেও একই কারণে ভোট দিত৷ বাম আমলে মুসলমানদের যে কোনো উন্নতি হয়েছে তা অতি শত্রুও বলবে না৷ তবু তারা আপনাদেরই ভোট দিত৷ একইভাবে তৃণমূল শাসনে মুসলমানদের আর্থিক বা সামাজিক কী উন্নতি হয়েছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ – কিন্তু তাও তারা ভোট দিতে বাধ্য হচ্ছে বিজেপি নামক অতি ঘৃণ্য এক শক্তির করালগ্রাস থেকে বাঁচতে৷ 

এবছর পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীতে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল৷ দেখা গেল বিজেপির প্রায় সমান সংখ্যক মিছিল বের করেছে তৃণমূল৷ বিজেপির মিছিলের সঙ্গে অবশ্য তাদের মিছিলের গুণগত কিছু পার্থক্য থেকে গিয়েছে৷ বিজেপি যেখানে অস্ত্রের ঝলকানি দেখিয়েছে, সেখানে তৃণমূল মূলত সম্প্রীতির বার্তা দেখিয়েছে৷ এবং পুলিশ সচেতন থেকে প্রায় কোন দুর্ঘটনাই ঘটতে দেয়নি৷ 

এখানেও, সেই একভাবে বিজেপিকে বিজেপির অস্ত্রে বধ করবার কৌশল দেখতে পাচ্ছি৷ অর্থাৎ, হিন্দুত্বের পাল্টা হিসাবে অন্য এক হিন্দুত্বের আগমন ঘটছে৷ এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, পশ্চিমবঙ্গে কাশ্মীনকালেও রামনবমী কোনো বড়ো উৎসব ছিল না৷ এবার যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেও সেটার উদ্যাপন হল কোনো বাধা ছাড়াই৷ 

ওয়াকফ বিল পাশ হল 4 তারিখ৷ ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে সিপিএম বা তৃণমূল কারোর কোনো আন্দোলন চোখে পড়ছে না৷ পরবর্তীকালে তারা কীভাবে এগোতে চায় বা অদৌ এগোতে চায় কী না সেটা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরে কিছু মুসলমান মানুষ রাস্তায় প্রতিবাদে জড়ো হয় 8 তারিখে৷ যে পুলিশ রামনবমীর অস্ত্র মিছিলে, নোংরা স্লোগানে কোনো লাঠিচার্জ করেনি, তারা কিন্তু এবার জমায়েতের সঙ্গে সঙ্গেই লাঠিচার্জ শুরু করল৷ সঙ্গে ছুঁড়তে থাকল কাঁদানে গ্যাস৷ ফলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হল৷ বহু প্রতিবাদী আহত হলেন৷ তারা পাল্টা ইট ছুঁড়ল এবং পুলিশের দুটো গাড়িতে আগুন লাগাল৷ 

এখন প্রশ্ন আসতে পারে তৃণমূল সরকার কেন ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে যে জমায়েত হল সেখানে এতো বর্বরতা দেখাল যেখানে তারাই এই বিলের বিরুদ্ধে লোকসভায় ভোট দিয়েছে?

এই খেলাটা তৃণমূল বেশ কয়েকবছর ধরেই খেলছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনগোষ্টির কাছে ওয়াকফ আইন একটা বড়ো ব্যাপার৷ এই আইনের প্রতিবাদ হবেই৷ কিন্তু প্রতিবাদটি করবে তারাই৷ কোনো মুসলমান সংঘটনকে প্রতিবাদ করতে দেওয়া চলবে না৷ কোনো মুসলমান গোষ্টী সক্রিয়ভাবে এই আইনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলে সেটাকে নির্মমভাবে দমন করতেই হবে৷ কারণ মুসলমানদের নিজেদের কোনো গোষ্ঠী থাকতে দেওয়া চলবে না৷ এতে তার প্রাপ্য ভোটে প্রভাব পড়তে পারে৷ তিনিই মাসিহা হয়ে চাঁদ সদাগরের মতো পেছন ফিরে ভিক্ষা দেবার মতো ‘প্রতিবাদ’ করবেন৷ একমাত্র তারাই, মুসলমানদের জন্য কথা বলবেন – মুসলমানরা যেন মুসলমানদের জন্য কোনো কথা না বলে৷ 

সিপিএম বলে – তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সেটিং রয়েছে৷ ওদিকে তৃণমূল সন্দেহ করে বিজেপির হয়ে কাজ করছে সিপিএম৷ 2026-র ভোটের আগে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে, এরা দুই পক্ষই সঠিক৷

Sadique Hossain in a writer based in Kolkata

We look forward to your comments. Comments are subject to moderation as per our comments policy. They may take some time to appear.